নদীয়া নিউজ ২৪ ডিজিটাল: উত্তমের সেই ভুবন ভোলানো হাসি, প্রেমিকসুলভ আচার-আচরণ এখনো মানুষের মন মাতায়। বিস্মৃতিপ্রবণ বাঙালি তাঁকে আজও মনে রেখেছে, এটাই বোধ হয় সব চেয়ে আশ্চর্যের। বাংলা সিনেমার আইকন হয়ে কোটি হৃদয়ে এখনো বেঁচে আছেন মহানায়ক উত্তম কুমার। আজ ৩ সেপ্টেম্বর তার জন্মদিন। মহানায়কের জীবনটাই যেন পুরো একটা সিনেমার গল্প। আজ তিনি আর নেই, পরে রয়েছে শুধু স্মৃতিটুকুই। তবে যা কিছু তিনি দিয়ে গেছেন, তা আর দ্বিতীয়টি গড়ে তোলা সম্ভব হবে না।
১৯২৬ সালের আজকের দিনে কলকাতার ভবানীপুরে মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্মেছিলেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা। তার আসল নাম ছিল অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়। সিনেমায় এসে নিজের নাম পাল্টে রাখেন উত্তম কুমার। শিক্ষাজীবন শেষ না করেই কলকাতা পোর্টে কেরানির চাকরি শুরু করেন সংসারের হাল ধরতে। কিন্তু অভিনয়ের পোকাটা থেকেই গিয়েছিল মাথায়।
রূপালি পর্দায় উত্তম কুমারের শুরু ‘মায়াডোর’ নামের একটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। কেরিয়ারের শুরুতেই ৭ টি ছবি পরপর ফ্লপ। ইন্ডাস্ট্রি ‘ফ্লপ মাস্টার জেনারেল’ উপহার দিয়েছিল উত্তমকে। তারপরই তার নায়কসত্ত্বা বেরিয়ে এসেছিল। দাপুটে নায়কই ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছিলেন মহানায়ক। ১৯৫৩ সালে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবি দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে ঝড় তোলেন উত্তম কুমার। এই ছবির মধ্য দিয়েই বাংলা চলচ্চিত্রে আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তা পান তিনি৷ ১৯৭০ -এর পর থেকে উত্তম হয়ে উঠেছিলেন সকলের ‘মহানায়ক’।
সুচিত্রা সেনের সঙ্গে তার জুটি ছিলো তুমুল জনপ্রিয়৷ বহু সিনেমায় তারা কালজয়ী হয়ে আছেন। এছাড়াও সুপ্রিয়া দেবী, তনুজাসহ আরও অনেক নায়িকার সঙ্গেই সুপারহিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি৷
১৯৪৫ থেকে ১০৮০ সালের মধ্যে মোট ৩৭৫টি ছবিতে অভিনয় করেছেন উত্তম কুমার। দেখতে গেলে গড়ে প্রতি বছর ১১টি ছবি করেছেন মহানায়ক। বাংলা থেকে হিন্দি—সর্বত্র অবাধ যাতায়াত। বৈজন্তীমালা থেকে শুরু করে সুচিত্রা সেন, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, মাধবী মুখোপাধ্যায়, শর্মিলা ঠাকুর, সুপ্রিয়া দেবী, অপর্ণা সেন—প্রত্যেকের বিপরীতেই অভিনয় করেছেন বাঙালির চিরকালের হার্টথ্রব। শোনা যায় ১৯৭০ সালে মুক্তি পাওয়া উত্তম কুমার অভিনীত নিশিপদ্ম ছবিটি অগুনতিবার দেখেছিলেন রাজেশ খন্না ১৯৭২ সালে মুক্তি পাওয়া অমর প্রেম করার আগে।
১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই, বৃষ্টিভেজা দিনে চিরবিদায় নিয়েছিলেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের সর্বকালীন শ্রেষ্ঠ ম্যাটিনি আইডল মহানায়ক উত্তম কুমার। মৃত্যুর ৪১ বছর পেরিয়ে আজও তাঁর খ্যাতি আকাশছোঁয়া। মহানায়কের মৃত্যুদিনে ফিরে দেখা এক সোনালি অধ্যায়। যতো দিন বাংলা সিনেমা থাকবে তার নাম থেকে যাবে অমর হয়ে।