টাটা বাংলা ছেড়েছে তেরো বছর, সেই টাটাকেই বাংলায় ফেরাতে চান পার্থ চট্টোপাধ্যায়

নদীয়া নিউজ ২৪ ডিজিটাল: টাটা বাংলা ছেড়েছে ১৩ বছর। ১৩ বছর আগে হুগলির সিঙ্গুরে টাটার কারখানা চালুর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছিলেন রতন টাটা ৷ মূলত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমি অধিগ্রহণ বিরোধী আন্দোলনের জেরেই টাটা গোষ্ঠীর কর্ণধার রতন টাটাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল ৷ তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শিল্পায়নের স্বপ্ন সেখানেই থেমে গিয়েছিলে। এই সিঙ্গুর আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই তৎকালীন বাম সরকারকে হারিয়ে বাংলার মসনদে বসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে সংস্থার কারখানা উচ্ছেদ করে তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এসেছিল, সেই টাটা গোষ্ঠী কি আবার বিনিয়োগ নিয়ে ফিরতে চলেছে বাংলায় ? রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অন্তত সেই দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছেন।

সিঙ্গুর আন্দোলনের ওপর ভর করে রাইটার্স দখল করার পর, পরপর তিন বার রাজ্যের ক্ষমতা দখল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এতদিন পরে তারই মন্ত্রিসভার শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাজ্যে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানালেন টাটা কোম্পনিকে। ভোট পূর্ববর্তী প্রচারে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই উদ্দেশ্যেই দ্রুত অন্তত দু’টি বড় মাপের শিল্প রাজ্যে আনতে চান পার্থবাবু। ভারী শিল্প না হলে বড় আকারে কর্মসংস্থানের আশা পশ্চিমবঙ্গে নেই। চুপিসাড়ে এ কথা এক লপ্তে স্বীকার করেন শাসকদলের নেতা নেত্রীরাও।

সোমবার রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, “সেই সময় তাঁদের আন্দোলন টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে ছিল না। আন্দোলন ছিল জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে। সেই সময় সমস্যা ছিল তৎকালীন বাম সরকারের সঙ্গে। যেভাবে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল তার পদ্ধতি নিয়ে সমস্যা ছিল। টাটাদের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও শত্রুতা নেই বলেও জানিয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। দেশে ও বিদেশে টাটারা যথেষ্ট গুরুত্ব আর বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে কাজ করছেন। তাই টাটাদের তিনি দোষ দিতে চাননা বলেও জানিয়েছেন।”

এদিন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আরও বলেন, ‘‌এ রাজ্যে বিনিয়োগের জন্য টাটাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।‌ আমরা শিল্প স্থাপনের জন্য জমির প্রয়োজনীয় ছাড়পত্রের প্রক্রিয়া সহজ করব।’‌ তিনি এও উল্লেখ করেন যে, জোর করে জমি অধিগ্রহণ করা হবে না। জমি নীতিতে কোনও পরিবর্তন হবে না। ‘‌শিল্প সংস্থাগুলিকে নিজস্ব বা সরকারের নির্দিষ্ট ল্যান্ড ব্যাঙ্ক ও শিল্প পার্কের কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে।’‌

এরই পাশাপাশি পার্থ জানিয়েছেন, রাজ্যে আরও বিনিয়োগের জন্য ইতিমধ্যেই আগ্রহ দেখিয়েছে টাটা। রাজ্যের আধিকারিকদের সঙ্গে টাটার যোগাযোগও রয়েছে। ‘‘টিসিএস, টাটা মেটালিক্স এ রাজ্যে রয়েছে। কিন্তু এর পরেও যদি বড়মাপের কোনও বিনিয়োগ নিয়ে টাটারা আসতে চায়, তাহলে কোনও অসুবিধা নেই। উৎপাদন বা অন্য যে কোনও ক্ষেত্রে তারা বিনিয়োগ করতে পারে। সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি দফতরের সচিব সম্প্রতি আমাকে জানিয়েছেন, টাটা গোষ্ঠী এ রাজ্যে একটি টাটা সেন্টার তৈরি করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশও করেছে।’’

উল্লেখ্য, আজ থেকে ঠিক ১৫ বছর আগে সিঙ্গুর আন্দোলন নিয়ে রাজ্যের তৎকালীন বাম সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ২০০৬ সালে ২নং জাতীয় সড়ক সংলগ্ন সিঙ্গুরে ৯৯.১১ একর জমি অধিগ্রহণ করা নিয়ে ২৬ দিন অনশনে বসেছিলেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরেই সরাসরি টাটা গোষ্ঠীর সঙ্গে অশান্তিতে জড়ান তৃণমূল নেত্রী। টাটা কারখানার স্থান পরিবর্তন করে গুজরাটে। রাজ্যে যথেষ্ট পরিমাণ ভারী শিল্পের উপস্থিতি না থাকার কারণে অধিকাংশ সময়ই তৃণমূল নেত্রীর সিঙ্গুর আন্দোলনকেই দায়ী করেন বিরোধীরা। এমনকী, তৃণমূলের একাংশের নেতাদেরও ঘনিষ্ঠ মহলে একাধিকবার বলতে শোনা গিয়েছে, টাটা না গেলে এ রাজ্যে আরও শিল্প আসত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *